সাইবার অপরাধীদের দুর্গ শিল্পাঞ্চল নিয়ামতপুরে পুলিশি অভিযানে রিমান্ডে ৩

 

রামকৃষ্ণ চ্যাটার্জী, সালানপুর: ঝাড়খণ্ডের জামতারার পর এবার সাইবার ক্রাইমের দুর্গ হয়ে উঠেছে আসানসোলের কুলটি থানার অন্তর্গত নিয়ামতপুর মুচি পাড়া। সাইবার ক্রাইমের এলাকা হিসাবে নাম উঠে আসতে শুরু করেছে এই অঞ্চলের। আর এই নিয়ামতপুর মুচি পাড়া এলাকা থেকে সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত তিন  জন যুবককে গ্রেফতার করেছে নিয়ামতপুর থানার পুলিশ।

নিজস্ব চিত্র


পুলিশ সূত্রে খবর, গ্রেফতার হওয়া ওই সাইবার অপরাধীদের নাম বাদল রুইদাস, লক্ষ্মণ রুইদাস এবং করণ রুইদাস। তাদের কাছ থেকে এক ডজনেরও বেশি বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং এটিএম কার্ড উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদিকে সূত্রের খবর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ওই তিন যুবককে সোমবার আসানসোল জেলা আদালতে তোলা হলে আদালত তাদের সাত দিনের জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।


আটক করা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ছয় মাসের মধ্যে এক কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। ব্যাঙ্গালুরু, কর্ণাটক, বিহার এবং ওড়িশাসহ অনেক রাজ্য থেকে এই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলিতে টাকা পাঠানো হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সাইবার অপরাধের সাথে জড়িত অপরাধীরা অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে বেকার যুবকদের এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত করে। তারা যে এলাকার বাসিন্দা তাদের সঙ্গে যোগসাজশে দরিদ্র মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে। তাদের প্রলোভন দেখিয়ে  ব্যাংক একাউন্টে টাকা রাখেন এবং সাইবার প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ টাকা পাঠান।  বিনিময়ে, অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের প্রতি মাসে কমিশন হিসেবে কয়েক হাজার টাকা দেওয়া হয়।


গত কয়েক বছরে এই স্থান সাইবার অপরাধীদের শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। লক্ষণীয় যে এর আগে জামতারা এবং কার্মাটার সাইবার অপরাধের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হতো, কিন্তু গত কয়েক বছরে এই অপরাধের সাথে জড়িত কিছু অপরাধী নিয়ামতপুরকে তাদের নতুন আস্তানা বানিয়েছে।  জামতারার পর এখন নিয়ামতপুর হয়ে উঠেছে সাইবার অপরাধের কেন্দ্র। সাইবার ক্রাইমের চক্রের সাথে জড়িত যুবকরা কখনও ব্যাংকের ম্যানেজার হিসেবে মোবাইলে ফোন করে এবং কখনও আধার কার্ড লিঙ্ক করার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বর এর  তথ্য নিয়ে  তার ব্যাংকের সমস্ত টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয় মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে। 


নিয়ামতপুর থেকে গ্রেফতারকৃত যুবকদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।  এখন দেখার বিষয় যে পুলিশ সাইবার অপরাধের ভেতরে  পৌঁছতে পারে কি না।  সাইবার অপরাধীদের দমন করা পুলিশের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

Post a Comment

0 Comments