দারিদ্র্যতাকে জয় করেই নিজের বিদ্যালয়ে প্রথম কোচবিহারের ফারহানা


নিজস্ব প্রতিবেদক, কোচবিহার: কয়েকদিন আগেই চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল বেরিয়েছে। তবে করোনার দাপটে এই বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সব পরীক্ষাই বাতিল হয়েছিল। যদিও সবটাই রাজ্য প্রশাসন পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের উপর ছেড়ে দিয়েছিল সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে। সবার সিদ্ধান্ত মতেই এবার পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। কিন্তু এইরকম পরীক্ষার সিদ্ধান্তে অনেক উচ্চআশাবাদী ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁদের নিজেদের ওপর আস্থা হারিয়েছিল। তবে অনেকেই আবার করোনার পরীক্ষা বাতিল হওয়াটাই বেশি যুক্তিযুক্ত মনে করছেন এখনো।

কারণ অনেকেরই ধারণা ছিল হয়তো পরীক্ষা দিলে  আরো ভালো ফলাফল আশা করা যেত। তাই অনেক পড়ুয়ারা যেরকমটা ভেবেছিল সেইরকম নম্বর পায়নি তারা। এছাড়া এবারে ৭৯ জন মাধ্যমিকে ফার্স্ট হয়েছে, এবং উচ্চমাধ্যমিকেও কয়েকজন ফার্স্ট। যা একেবারেই নজিরবিহীন। তবে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরই প্রচুর ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নাম্বর কম পাওয়ার কারণে নিজেদের বিদ্যালয়ে হামলা করেছিল। এখনও করছে। 

বাবা মায়ের সাথে ফারহানা

তবে মরিচবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ফারহানা মোস্তাফী সন্তুষ্ট তার রেজাল্ট নিয়ে। সে জানায়, ক্লাসে বরাবর প্রথম হয়ে এসেছে, সেজন্য পরীক্ষা হলেও স্কুলে প্রথম হতোই এবং এরকমই নম্বর পেত।

খুবই সাধারণ পরিবারের একজন মেয়ে ফারহানা। বাবার নাম মোজাফফর হোসেন, পেশায় কৃষক। মায়ের নাম ফেরদৌসী সুলতানা। কোচবিহার ২ নং ব্লকের গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সে। ছোটবেলা থেকেই অভাবের সংসারে বড় হওয়া তাঁর। অল্প কিছু জমিতে চাষবাস করেন তার বাবা। আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাবে এবং প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ার কারণে ফারহানা টিউশনের তেমন সুবিধা পায় নি দশম শ্রেণীতে। ছোটবেলা থেকে কখনো গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার সুযোগ হয় নি তার। ছোট থেকেই ফারহানা পড়াশোনায় খুবই ভালো, সব শ্রেণীতেই প্রথম হত, তাই তাকে স্কুলের শিক্ষকরাই গাইড করেন।মাধ্যমিকের জন্যে ভালো করে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন সে, কিন্তু শেষ মুহূর্তে পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় কিছুটা মন খারাপ হয়েছিল ফারহানার। তবে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিল সে।

অভাবের সংসারে থেকেও ফারহানার উচ্চস্বপ্ন। তার ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। সেকারণেই তার ইচ্ছে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়ার। ঠিক তাই হল আর্থিক অবস্থা কাউকেই নিচে রাখতে পারেনা। যার জ্ঞান আছে, প্রতিভা আছে সে সবকিছুর উর্ধে গিয়ে নিজের স্বপ্নকে জয় করবেই। তাই তো নবম শ্রেণীতে এবং মাধ্যমিকের রেজাল্টে প্রতি বিষয় নব্বইয়ের ঘরে। কৃষিজীবী এলাকায় সাধারণ পরিবারের মেয়ে ভালো ফল করায় আনন্দ সম্পূর্ণ গ্রামে। শুভেচ্ছা ও সংবর্ধনা দিয়েছেন স্থানীয়রা।

কিন্তু এখন ফারহানা একটু চিন্তিত, কেননা তাদের এলাকার স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ নেই। সেকারণে তাকে শহরে থেকে পড়াশোনা করতে হবে, যা যথেষ্ট খরচ সাপেক্ষ। আর মাধ্যমিকেও সে স্কুলের মধ্যে প্রথম হয়েছেন, ছোটবেলা থেকে প্রায় সব ক্লাসেই প্রথম হয়ে এসেছে। 


ফোন কলে ফারহানার বাবা প্রতিবেদককে জানান, "আমাদের এলাকায় বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনার কোনো সুযোগ নেই। তাই তাকে শহরে পড়াতে হবে। কিন্তু এখান থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো নেই। তাই তাকে শহরে ভাড়াবাড়িতে রেখে বা কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে পড়াতে হবে। এত খরচ নিয়ে একটু চিন্তায় আছি।"

Post a Comment

0 Comments