নামী কোম্পানির আলুর বীজ কিনে বিপাকে কৃষক! আভিযোগ জানাতে গেলে হেনস্থা কৃষককে




ধূপগুড়ি, ২২ নভেম্বরঃ চড়া দামে নামি কোম্পানীর বীজ কিনে শোধন করে বোনার পরেও চারা গজানো দূরের কথা উলটে পচে গেছে অধিকাংশ বীজ। এদিকে জমিতে পাগানো বীজ পচে যাওয়ার সমস্যার কথা জানাতে গেলে ক্ষতিপূরণের বদলে উলটে অভিযোগকারী কৃষককে মেরে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক। শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে ধূপগুড়ি কলেজ রোডে সুপার মার্কেট মোড় সংলগ্ন একটি বীজের দোকানে। জানা গেছে নাথুয়ার মাঝিয়ালি এলাকার বাসিন্দা মন্তোষ শা নামে এক কৃষক ৬ নভেম্বর ধূপগুড়ির দুটি বীজের দোকান থেকে যথাক্রমে ২৬ ও ২০ প্যাকেট পোখরাজ আলুবীজ কিনে নিয়ে যায়। 



সেই বীজ শোধনের পর দুই ভাগে সেই বীজ জমিতে বোনে ঐ কৃষক। কৃষকের অভিযোগ অন্য একটি দোকান থেকে কেনা ২০ প্যাকেট বীজ জমিতে বোনার পর ইতিমধ্যেই চারা গজাতে শুরু করলেও আরেক দোকান থেকে কেনা ২৬ প্যাকেট বীজ মট সাত বিঘা জমিতে বোনার পরে ইতিমধ্যেই সাড়ে ছয় বিঘা জমির বীজ পুরটাই পচে গেছে। ঐ কৃষক জানান শনিবার পরিবারের আরো কয়েক সদস্যদের নিয়ে সংশ্লিষ্ট বীজের দোকানে এই সংক্রান্ত অভিযোগ জানাতে এলে বীজের দোকান তথা ঐ আউর আড়তের কর্মীরা তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের মারধোর করে, তাদের পোষাক ছিড়ে দেয় এবং দোকান থেক বেড় করে দেয়। এর জেরে পথে জটলা তৈরি হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌছায় ধূপগুড়ি থানার পুলিশ। 



এরপর পুলিশের মধ্যস্থতায় দশ দিনের সময় নেয় ঐ ব্যবসায়ী এবং ফিরিয়ে দেওয়ায় হয় ঐ কৃষক ও তার পরিবারের সদস্যদের। তবে তাদের কেন মারধোর করা হলো বা পোষাক ছিড়ে দেওয়া হলো তা নিয়ে কেউই কোন প্রতিবাদ করেনি। ঐ কৃষক জানিয়েছেন পচে যাওয়া বীজ যে রসিদের কেনা হয়েছিল নিজেকে ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক পরিচয় দেওয়া স্বপন দত্ত নামে এক ব্যবসায়ী রেখে দেন। এবিষয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক বলেন, বস্তা প্রতি প্রায় দু হাজার টাকায় কেনা ঐ ২৬ প্যাকেট বীজ পদ্ধতিমাফিক শোধন করেই বোনা হয়েছিল। ১২ নভেম্বর বীজ বোনার কাজ শেষ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই জমি থেকে পচা গন্ধ বেড় হতে শুরু করায় দুই এক জায়গায় খুচিয়ে দেখি ভেতরে বীজ পচে গেছে। এরপর যতটুকু দেখেছি একই হাল। বীজের দাম ছাড়াও সার, চাষের খরচ, শ্রমিক সহ সবমিলে দেড় লক্ষ টাকা লোকসান হয়ে যাবে এই বীজ না গজালে। পুরো টাকাটাই ঋণ নিয়েছি ফলে বীজ পচে গেলে আমি সর্বশান্ত হয়ে যাবো।


এদিন বীজ নিয়ে সমস্যার কথা জানাতে এসে আড়তের কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়ে কৃষকের বাবা অশীতিপর জগন্নাথ শা বলেন, আমরা গ্রামে থাকি আর চাষাবাদ করে খাই। শহরে বড়ো আলুর গদিতে অভিযোগ জানাতে গেলে এরকম ভাবে মারধোর করে জামা কাপড় ছিড়ে দেওয়া হয় সেটা জানতাম না। ছেলেদের সামনেই আমাকে আঞ্ছিত হতে হও আর আমার সন্তানদেরও। ওনারা বড়োলোক বলে সবাই হয়ত ওদেরই ভয় পায়।


তবে কৃষক বা তার পরিবারের লোকেদের মারধোর করার কথা অস্বীকার করেছে বীজ বিক্রেতা। সেই সাথে বিক্রিত বীজ থেকে চারা গজাবে বলেই জানান বীজ বিক্রেতা বাবলু চৌধুরি। তিনি বলেন, ঐ কৃষক বীজ বোনার পর চারা গজানোর সময়টুকুও অপেক্ষা না করেই অভিযোগ করছেন চারা না গজানোর। আমরা তাকে আরো দশ দিন অপেক্ষার কথা বলেছ। যদি সেই সময় বীজ থেকে চারা না গজায় তাহলে তার যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা আমি দিয়ে দেবো।

Post a Comment

0 Comments