স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ১৮ লক্ষ টাকা জালিয়াতির দায়ে গ্রেফতার স্বামী স্ত্রী




রামকৃষ্ণ চ্যাটার্জী, পশ্চিম বর্ধমান:গ্রামীণ মহিলাদের আত্মনির্ভর করার জন্য মহিলাদের নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তৈরি হয় একাধিক স্বনির্ভর গোষ্ঠী। আর সেই মিহিলা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই উঠলো টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। এক নয় দুই নয় নয় লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠলো ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এমনি ঘটনা ঘটেছে সালানপুর থানার রূপনরায়নপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পিঠাকেয়ারীতে। এঘটনায় ওই গোষ্ঠীর দলনেত্রী ঝুমুর চ্যাটার্জী ও তার স্বামী কে স্বনির্ভর মহিলা গোষ্ঠীর কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে আটক করল সালানপুর থানার পুলিশ। 



পাশাপাশি তাদের মেয়েকেও পুলিশ খুঁজছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পাশাপাশি গ্রেফতার হওয়া ওই দু’জনকে। এখন তারা বিচার বিভাগীয় হেফাজতে আছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। সালানপুর ব্লকের বেশকিছু মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী একত্রিত হয়ে নিজেদের স্বনির্ভর করতে কিছু গোষ্ঠী তৈরি করেন আর ঐসকল মহিলা গোষ্ঠীর সভানেত্রী ছিলেন দেন্দুয়া পঞ্চায়েতের বাঁশকেটিয়া এলাকার আইসিডিএস কেন্দ্রের কর্মী ঝুমুর চ্যাটার্জী তিনি পিঠাকেয়ারীর বাসিন্দা।



প্রতাপপুর আদিবাসী এলাকার বেশ কয়েকটি স্বয়ম্ভর গােষ্ঠী নিয়ে গঠিত প্রেরণা উপসংঘের নেত্রী ছিলেন তিনি।আর সরকারি নিয়মঅনুযায়ী ২০১৮ সাল থেকেই এইসব স্বয়ম্ভর গােষ্ঠীর মহিলারা নিজেদের স্বনির্ভর গড়ে তুলতে রূপনারায়নপুর স্টেট ব্যাংক থেকে বিভিন্ন গোষ্ঠীর নামে ঋণ গ্রহণ করেছিলেন। যার মধ্যে অন্নপূর্ণা,নয়াসাগেন,সিধু কানু, ফোগাল,তারাস, আদিবাসী প্রতাপপুর ও মার্শাল এই সাতটি আদিবাসী মহিলা গোষ্ঠী ২০১৮ সাল থেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাবসা চালাতেন।



প্রতাপপুর আদিবাসী এলাকার বেশ কয়েকটি স্বয়ম্ভর গােষ্ঠী নিয়ে গঠিত প্রেরণা উপসংঘের নেত্রী ছিলেন ঝুমুর চ্যাটার্জি।ঐসকল আদিবাসী মহিলা গোষ্ঠীর অভিযোগ যে তারা ঋণের মাসিক যে টাকা জমা করতেন তা ব্যাংকে জমাই পড়ত না। প্রায় সকল গোষ্ঠী মিলিয়ে টাকার অঙ্ক ৯ লক্ষ এর বেশি।তারা একথা জানলেন যখন ব্যাংকে থেকে তাদের ডেকে পাঠান হয় ।



প্রায় আনপড় ওই সব মহিলারা ব্যাঙ্কে খুব একটা যেতেন না। তাদের অভিযােগ ব্যাংকে ঋণশােধের মাসিক কিস্তি তারা ঝুমুর চ্যাটার্জির হাতে দিতেন কিন্তু দিনের পর দিন সেই টাকা ব্যাংকে জমা পড়েনি। প্রায় ২০১৮ সাল থেকে এই অবস্থা চলে আসছিল। অবশেষে ব্যাংকে ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের ঋণ প্রায় ১৮ লাখে গিয়ে দাঁড়ায়।এদিকে ব্যাংকে টাকা জমা না পড়াতে ব্যাংক থেকে গোষ্ঠীর সকল সদস্যের একাউন্ট থেকে টাকা কাটতে শুরু করে।এরপরেই সকলে তাদের দলের নেত্রী ঝুমুর চ্যাটার্জির সাথে কথা বলেন, এবং ঝুমুরকে টাকা শােধ করে দেওয়ার জন্য বলেন 



কিন্তু ঝুমুর বিভিন্ন অজুহাতে দেখিয়ে সমস্ত বিষয়টি এড়িয়ে যেতে থাকেন আবার নিজের মেয়ের বিয়ের কথা বলে তাদের আশ্বাস দিতেই থাকেন। অবশেষে নিরুপায় হয়ে ওই গােষ্ঠীর মহিলারা সালানপুর পঞ্চায়েত মতির সভাপতি ফাল্গুনী কর্মকার ঘাসির কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। এবিষয়ে ফাল্গুনী কর্মকার ঘাসি জানায় যে তিনি নিজে এবং বিডিও ঝুমুরকে ডেকে ব্যাংকে টাকা শােধ করে দেওয়ার পরামর্শ দেন কিন্তু ঝুমুর চ্যাটার্জী আমাদেরও একই কথা বলতে থাকেন এবং একগুঁয়ে মনােভাব দেখিয়ে বিষয়টিতে জড়িত থাকার অভিযােগ অস্বীকার করতে থাকেন। 



শেষমেষ ব্লক প্রশাসনের পরামর্শ মতাে গােষ্ঠীর মহিলারা বিষয়টি লােক আদালতে জানান। লােক আদালত ব্লক কার্যালয়ে এসে ঝুমুর চ্যাটার্জির সঙ্গে স্বয়ম্ভর গােষ্ঠী ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের নিয়ে আলােচনা করেন। কিন্তু তাতেও কোন সমাধান না মেলায় শেষমেষ স্বয়ম্ভর গােষ্ঠীর–৪০ জন সদস্যা জেলার উপজাতি সেলে ঝুমুরের বিরুদ্ধে অভিযােগ করেন। উপজাতি সেলের সুপারিশক্রমে সালানপুর থানায় ঝুমুরের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয় ।



এরপরই এসিপি(কুলটি) ওমর আলি মােল্লার নেতৃত্বে ঝুমুর চ্যাটার্জী ও তার স্বামী শেখর চ্যাটার্জিকে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং তার মেয়ের নাম থাকায় তাকেও খুঁজছে পুলিশ। এসিপি(কুলটি) ওমর আলি মােল্লা বলেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যাবতীয় তথ্য প্রমাণ পুলিশ সংগ্রহ করেছে । এ প্রসঙ্গে সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ফাল্গুনী কর্মকার ঘাসি বলেন তারা বহু চেষ্টা করেছিলেন বিষয়টিকে সহজভাবে সমাধান করার জন্য। ব্যাঙ্ক যাতে তার পাওনা টাকা পেয়ে যায় সেই উদ্যোগ তারা নিয়েছিলেন।



কিন্তু ঝুমুরের আচরণে তা সম্ভব হয়নি তাই ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি ব্লকের সি.ডি.পি.ও সাথে বৈঠক করেন।তাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যেহেতু আর্থিক তছরুপের দায়ে ঝুমুর গ্রেফতার হয়েছেন সেজন্য আইসিডিএস কর্মী হিসেবে তার প্রাপ্য ভাতা পাওয়া এখন বন্ধ থাকবে এবং বাঁশকেটিয়া আই সিডিএস কেন্দ্রে তার পরিবর্তে অন্য একজনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া ।

Post a Comment

0 Comments