১৯৮০ ও ৯০-এর দশকের অনেক তরুন ও স্কুলপড়ুয়ার কাছে পরিচিত নাম ছিল হিরো – হাল্ক হোগান। সাদাকালো টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখলেই দেখা যেত এক বিশালদেহী কুস্তিগির, গা-ভর্তি পেশি, মোটা সোনালি গোঁফ, মাথায় ব্যান্ডানা—তিনি-ই হাল্ক হোগান, যিনি শুধু WWE রিং-এ নয়, জায়গা করে নিয়েছিলেন গোটা বিশ্বের অগণিত কিশোর-কিশোরীর মনে।
আজ সেই স্মৃতির মানুষ আর নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বাড়িতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন WWE-এর কিংবদন্তি তারকা হাল্ক হোগান। বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।পরিবার সূত্রে খবর, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তড়িঘড়ি ৯১১-এ ফোন করে জরুরি পরিষেবা ডাকা হলেও, তাঁকে বাঁচানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালেই মৃত্যু হয় এই তারকার।
হোগান: ৯০ দশকের বাংলার অজস্র ‘ছদ্মনাম’
বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ—সবখানে হোগান ছিলেন এক আবেগ। বাচ্চারা তাঁদের ব্যাগে রাখত WWE স্টিকার, ছোট ছোট কার্ড। অনেকেই নিজের ছদ্মনাম রেখেছিল হাল্ক হোগান। কারও গলা কাঁপত হোগানের মতো, কেউ মজা করে জিমের আয়নায় হোগানের ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে নিজের পেশি মাপত।
WWE-এর স্বর্ণযুগের মুখ
১৯৮০ থেকে ৯০ দশক পর্যন্ত WWE-এর উত্থানের নেপথ্যে সবচেয়ে বড় নাম ছিল হোগান। একাধারে ছ’বার WWE চ্যাম্পিয়ন ছিলেন তিনি। ৯টি রেসলমেনিয়ার মধ্যে ৮ বারই প্রধান আকর্ষণ ছিলেন হোগান। তাঁর উপস্থিতিই টিভির রেটিং বাড়িয়ে দিত। তাঁর জনপ্রিয় বাচনভঙ্গি — “Whatcha gonna do when Hulkamania runs wild on you!” আজও অনেকে মনে রেখেছেন।তাঁর গঠিত ‘Hulkamania’ ও ‘Real American’ থিম সং WWE-র ঐতিহ্যে আজও অন্যতম।
সিনেমার স্ক্রিনেও হাল্ক
শুধু রিং নয়, হোগান তাঁর জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করে হলিউডের দিকেও এগিয়ে যান। অনেক অ্যাকশনধর্মী ও কমেডি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। তখনই তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত হয় ‘হলিউড হাল্ক হোগান’।
ডব্লিউডব্লিউই-এর সঙ্গে বিচ্ছেদ
১৯৯৬ সালে হোগান WWE ছেড়ে নতুন সংস্থা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার (nWo)-এর সঙ্গে যুক্ত হন। তখন তিনি WWE-এর অন্যতম বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন।তবে ২০০৫ সালে WWE তাঁকে ‘হল অফ ফেম’-এ অন্তর্ভুক্ত করে। WWE-এর ইতিহাসে খুব কম রেসলারই এই সম্মান পেয়েছেন।
বিতর্ক আর আইনি লড়াই
২০১৫ সালে হোগানের একটি ব্যক্তিগত ভিডিয়ো ফাঁস হয়ে যায়। তা ঘিরে শুরু হয় বিতর্ক। WWE তাঁকে হল অফ ফেম থেকে সরিয়ে দেয়। হোগান সেই ভিডিয়ো প্রকাশকারী সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং জিতে যান। ক্ষতিপূরণ দিতে গিয়ে সেই সংস্থা দেউলিয়া হয়ে যায়। পরে, ২০২০ সালে WWE আবার হোগানকে হল অফ ফেমে ফিরিয়ে আনে।
ট্রাম্প-সমর্থক হালক
সমাজ ও রাজনীতিতেও হাল্ক হোগান চুপ থাকেননি। মার্কিন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের খোলাখুলি সমর্থক ছিলেন তিনি। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে হোগান একাধিক সভায় অংশ নেন।
শেষদিকে শারীরিক অবনতি
গত মাস থেকেই শারীরিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন হোগান। একাধিক অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে। সেসময় সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, তিনি কোমায় রয়েছেন। যদিও তাঁর স্ত্রী সেই তথ্য উড়িয়ে দিয়ে জানান, “হাল্ক লড়ছে, এখনও থামেনি।”কিন্তু শেষ পর্যন্ত থেমে গেল হাল্ক হোগান নামের ঝড়।
শোকের ছায়া ভক্ত ও WWE মহলে
হাল্ক হোগানের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা WWE পরিবার। কিংবদন্তি রেসলার জন সিনা, দ্য আন্ডারটেকার, রিক ফ্লেয়ার, ট্রিপল এইচ সহ একাধিক তারকা সোশ্যাল মিডিয়ায় শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছেন, “হাল্ক হোগান ছিলেন আমাদের সময়ের আসল সুপারহিরো।”
বাংলা ও বাঙালির কাছেও হাল্ক হোগান শুধুই একজন রেসলার ছিলেন না—ছিলেন এক জীবন্ত স্বপ্ন। তাঁর মৃত্যুর খবরে সেই স্বপ্নে যেন ছাই পড়ল।
0 Comments